Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য নিরাপত্তায় সমন্বিত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা

মো: মোসাদ্দেক হোসেন১, ড. শেখ শামিউল হক২ ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন৩

বর্তমান সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা বিশ^ব্যাপী একটি আলোচ্য বিষয়। কারণ কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিশ^ব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ বছর খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফপ্রির প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে দ্রæত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম রয়েছে সবার উপরে। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে মনে করে সংস্থাটি। বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদিত হলেও ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দানাদার ফসল উৎপাদন ও রক্ষার যাবতীয় কৌশল সুচারুভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ফসল উৎপাদন ও রক্ষার বিষয় আলোচনা করতে হলে ইঁদুরকে বাদ রেখে সম্ভব নয়। কারণ উৎপাদন ও গুদামজাতকরণ উভয়ক্ষেত্রেই ইঁদুর খাদ্য প্রাপ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । উৎপাদন বৃদ্ধি ধরে রাখতে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো এবং অতিরিক্ত উৎপাদন উপকরণ ব্যবহারের ফলে অন্যান্য বালাইয়ের মতো ইঁদুরের প্রকোপও বেড়ে গেছে।
ইঁদুর একটি পরিচিত বৈশ্বিক প্রাণী, যা মানুষের খাদ্যে ভাগ বসিয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘœ সৃষ্টি করে। ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের অনবরত কাটাকাটির অভ্যাস বিদ্যমান। এর সদা বর্ধিষ্ণু দাঁত আছে। ক্ষয়ের মাধ্যমে দাঁতের এই বৃদ্ধিরোধ করার জন্য ইঁদুর সব সময় কাটাকাটি করে। ইঁদুর খুব চতুর এবং যে কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নিয়ে দ্রæত বংশ বিস্তার করতে পারে। এই স্তন্যপায়ী মেরুদÐী প্রাণিটি আমাদের বিভিন্ন ফসল যেমন ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, বিভিন্ন ফল ও শাকসবজির ক্ষতি করছে, গুদামজাত শস্যে মলমূত্র ও লোম সংমিশ্রণ করছে, আমাদের বাসা বাড়ির আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, জামা-কাপড়, বিছানাপত্র এবং বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি করছে, পাশাপশি বাঁধ, রেললাইন, জাহাজ, বন্দর, মাতৃসদন, এরোপ্লেন, সেচের নালাসহ সর্বত্র ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। এক কথায় কোন সম্পদই ইঁদুরের হাত থেকে রেহাই পায় না। প্রায় সমস্ত কৃষি ফসলই ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইঁদুর মানুষ ও গবাদিপশুতে ৬০ ধরনেরও বেশি রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে ইঁদুরের দ্বারা সৃষ্ট ফসলের ক্ষতির নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান যেমন পাওয়া কঠিন তেমন ইঁদুরবাহিত রোগেরও কোন তথ্য পাওয়া যায় না। গুদামে রাখাশস্যে ইঁদুর এর ক্ষতি বা মলমূত্র ও লোম সংমিশ্রণের তথ্যও সংগ্রহ করা হয় না। ইঁদুর দ্বারা ফসলের যে ক্ষতি  হয় তা কমানো গেলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা  নিশ্চিত হবে আবার অন্যদিকে আয়ও বাড়বে।  ইঁদুরের হাত থেকে গুদামের ফসল রক্ষা এবং খাদ্যে মলমূত্র ও লোম সংমিশ্রণ বন্ধ করা গেলে স্বাস্থ্য, নিরাপদ খাদ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তারও কমে যাবে। পোকামাকড়ের তুলনায় ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করা আপাত খুব কঠিন মনে হলেও অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় সঠিক জ্ঞান এবং কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইহার সংখ্যা লাগসই ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। অনেক সময় আমাদের দেশে ইঁদুরের সমস্যা সমাধানের জন্য কোন চাহিদাও থাকে না। ইঁদুরের সমস্যা গ্রামের লোকজন সঠিকভাবে বুঝতে পারে না, সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় কোন পদ্ধতিও পর্যাপ্ত নয়। তাই এই ক্ষতি স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করে থাকে। গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর ইঁদুর কী পরিমাণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা সঠিকভাবে বুঝে উপযুক্ত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ধান উৎপাদনকারী এশিয়ার প্রতিটি দেশে কৃষক, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা ইঁদুরকে গুরুত্ব¡পূর্ণ বালাই হিসেবে বিবেচনা করে। এসব দেশে শুধু ধান কর্তন থেকে গুদামে রাখা অবস্থায় ২-২৫ ভাগ পর্যন্ত ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তÍ হতে পারে। বাংলাদেশের অর্ধেক জমির ফসল ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান, গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। গবেষণা থেকে জানা যায় তিন মাসের জন্য ধান গুদামে রাখা হলে ৫ থেকে ১০ ভাগ ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশে গড়ে প্রতি কৃষক পরিবারে প্রতি বছরে ২০০ কেজি ধান ইঁদুরের দ্বারা নষ্ট হয়। বৃষ্টিনির্ভর ও সেচ সুবিধাযুক্ত ধানের জমিতে ফসল কাটার পূর্বে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, গোলআলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭% এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫% ক্ষতি করে।  ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচ নালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে। ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা  মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল ক্ষেয়ে নষ্ট করে তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর অমেরুদÐী প্রাণী বিভাগের হিসাবে ইঁদুর দেশের প্রতিটি মুরগির খামারে বছরে ১৮ হাজার টাকার ক্ষতি করে। ইঁদুরের দ্বারা বাসা বাড়ির অন্যান্য ক্ষতি, শহর-গ্রামের দোকান, কারখানা, রাস্তাঘাট, সেচনালা, জমির আইলের যে ক্ষতি হয় তা      বেশির ভাগ সময় বিবেচনা করা হয় না। ইঁদুর বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গর্ত করে এবং মাটি সরিয়ে বাঁধ দুর্বল করে ফেলে। ফলে বাঁধ ভেঙে পানি দ্বারা প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর, ফসলাদি ও গবাদিপশুর যে ক্ষতি সাধন করে তার আর্থিক মূল্য বিবেচনা করলে ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ধান ফসলে ইঁদুরের ক্ষতি
সাধারণত আগাম পরিপক্ব ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। ইঁদুর ধান গাছের কুশি তেঁরছা কোণে (৪৫ ডিগ্রি) কেটে দেয়। গাছে শীষ বের হলে শীষ বাঁকিয়ে নিয়ে কচি ও পাকা শীষগুলো কেটে দেয়। ইঁদুর ধান ফসলে তিন মৌসুমেই আক্রমণ করতে পারে। তবে আমন মৌসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানি সহজলভ্য হওয়া এবং মৌসুমের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কম ও আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এসময়ে ইঁদুরের প্রজনন খুব বেশি হয়। ফলে ইঁদুরের সংখ্যা অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেড়ে যায়। ইঁদুরের প্রজনন শুরুর পূর্বেই ইঁদুর নিধন করা দরকার। তাই আমন মৌসুমে ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময় ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক। কারণ এসময়ে মাঠে ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে। মাঠে প্রচুর খাদ্য না থাকায় ইঁদুর সহজেই এসময় বিষটোপ খেয়ে থাকে। আমন ফসল ক্ষতি করার আগেই ইঁদুর মারতে পারলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি কম হয় এবং  ফসলের ক্ষতিও অনেক কম হয়ে থাকে। ধান রোপণের সময় ও রোপণের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ধানের জমি ও আশপাশের এলাকার ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সমন্বিত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, এর ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই স্থান কাল পাত্রভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। এতে করে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুরবাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। তবে ইঁদুরকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এককভাবে ইঁদুর  দমন খুব বেশি কার্যকরি হয় না। সবাই মিলে একযোগে বেশি জায়গার ইঁদুর মারলে ফসল রক্ষা পায় ও ইঁদুরের সংখ্যা পরবর্তীতে বাড়তে পারে না। এজন্যই প্রতি বছর সরকারিভাবে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সচেতনতা বাড়িয়ে এটাকে সামাজিকভাবে আরো অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। গ্রামে, শহরে, জমিতে সর্বত্রই একযোগে ইঁদুর  নিধন করতে হবে। ইঁদুর যেহেতু নোংরা স্থান পছন্দ করে, সেহেতু ফসলের মাঠ, বাঁধ, বাড়িঘরসহ ইঁদুরের বংশবিস্তারের সব স্থান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে বংশবৃদ্ধি কমে আসে। এ ছাড়া ফাঁদ পেতেও ইঁদুর নিধন করা যায়। ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১) অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন  ২) রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন এবং ৩) জৈবিক পদ্ধতিতে দমন।  
অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন  
অরাসায়নিক পদ্ধতি হলো ভৌত ও যান্ত্রিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুরের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যেমন-
ি গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা। ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে এবং মরিচের ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা। জমির আইল চিকন (যেমন ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি), আগাছা এবং আবর্জনা ময়লা মুক্ত রাখা।
ি বাঁশের, কাঠের, লোহার ও মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা। যেমন- কেঁচিকল (করষষ ঃৎধঢ়), বাঁশের কল, বাঁশের ফাঁদ, জীবন্ত ইঁদুর ধরার ফাঁদ, মাটির ফাঁদ, মাটির চিটাগুড়ের ফাঁদ, তারের ফাঁদ। উক্ত ফাঁদগুলো আবার দুই ধরণের-জীবিত ও মৃত (¯œ্যাপ) ফাঁদ। জীবন্ত ফাঁদে আবার একক ইঁদুর বা বহু ইঁদুর জীবন্ত ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জীবন্ত ফাঁদে খাবার দিতে হয়। খাবার হিসাবে ধান বা চালের সাথে নারিকেল তৈলের মিশ্রণ তৈরি করে নাইলন বা মশারির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে টোপ হিসেবে দিতে হয়। এ ছাড়াও শুঁটকি মাছ, শামুকের মাংসল অংশ, পাকা কলা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় কলাগাছের ভেলার উপর ফাঁদ স্থাপন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। যখন দলগত বা সামাজিকভাবে বৃহৎ এলাকায় ফাঁদ ব্যবহার করা হয় তখন ইহা খুবই কার্যকরি হয়। কেঁচিকল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং রাসায়নিক ব্যবহারের তুলনায় সাশ্রয়ী।
ি গাছে ধাতব পাত ব্যবহার করা। গাছের কাÐে পিচ্ছিল ধাতব পেঁচিয়ে রাখলে ইঁদুর গাছে উঠতে পারে না বিধায় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ি গøুবোর্ড ব্যবহার করা। বেডে বা মেঝেতে ইঁদুরের খাবার রেখে চতুর্দিকে গøু বা আঠা লাগিয়ে রাখা। এক্ষেত্রে ইঁদুর খাওয়ার জন্য গøু-এর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আটকে যায়, আটকে পড়া ইঁদুরকে সহজেই মেরে ফেলা যায়।
ি খাদ্য ও তার অবশিষ্টাংশ ঢেকে রাখা। একই এলাকার ধান ফসল একই সময়ে লাগানো ও কর্তন করা।
ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ইঁদুরের প্রকোপ কমানো যায়। বাড়ি-ঘর ও ক্ষেতের আশেপাশের ঝোপঝাড়, জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার রাখা। প্রতিরোধক জাল ব্যবহার করা।
ি ধান ক্ষেতের চারদিকে এক মিটার উচ্চতায় পলিথিন দ্বারা ঘিরে ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধ করা।  
ি আগে পাকে এমন স্বল্প জীবনকালের ধান (যেমন ব্রি ধান৬২) চাষ করে ইহাকে ফাঁদ ফসল (ঞৎধঢ় পৎড়ঢ়) হিসেবে ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা।
ি বিভিন্ন যান্ত্রিক উৎপীড়ক (রিপেলেন্ট) যেমন-ভিডিও ফ্লিম টানিয়ে, মানুষের প্রতিকৃতি অথবা আলট্রা শব্দ সৃষ্টি করে জমি থেকে ইঁদুরকে সাময়িক সরিয়ে রাখা যায়। এর কার্যকারিতা তেমন নয় কারণ এতে ইঁদুরের সংখ্যা কমে না বরং দীর্ঘদিন ব্যবহারে এই সমস্ত ডিভাইসের প্রতি ইঁদুর অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমনে তিন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য যেমন- ১) একমাত্রা বিষটোপ ২) দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ এবং ৩) বিষ গ্যাস বড়ি ব্যবহার করা হয়।
একমাত্রা বিষটোপ : এ ধরনের বিষটোপ ইঁদুর একবার খেলেই সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। এরূপ সর্বাধিক পরিচিত বিষটোপ হচ্ছে গমে মিশ্রিত জিংক ফসফাইড (২%)। এটি ব্যবহারের কৌশল হলো জিংক ফসফাইড ছাড়া শুধু গম কয়েকদিন দিয়ে অভ্যাস করে হঠাৎ একদিন জিংক ফসফাইড মিশ্রিত গম প্রদান করা। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো বিষটোপ লাজুকতা দেখা দিতে পারে যদি মৃত ইঁদুরগুলো সরিয়ে ফেলা না হয়। বিষটোপ লাজুকতা হলো-  বিষটোপ খেয়ে ইঁদুর মরে পড়ে আছে, এটা দেখে জীবিত ইঁদুরের ঐ বিষটোপের প্রতি খাওয়ার অনীহা ।
দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ : এ ধরনের বিষটোপ ইঁদুর খেলে সঙ্গে সঙ্গে  মারা যায় না। ইঁদুরের শরীরে বিশেষ প্রতিক্রিয়া হয় এবং কিছুদিন অর্থাৎ ২ থেকে ১৪ দিন পর মারা যায়। যেমন- ল্যানির‌্যাট, স্টর্ম, ব্রমাপয়েন্ট, ক্লের‌্যাট ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ফলে ইঁদুরের দেহে সৃষ্ট বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ক্ষতের জন্য অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ইঁদুর দুর্বল হয়ে গর্তের মধ্যে মারা যায়। এখানে বিষটোপ লাজুকতা দেখা যায় না। এই বিষটোপগুলোকে আবার একমাত্রা এবং বহুমাত্রা এই দুই ভাগে ভাগ করা হয় অর্থাৎ বিষটোপ  ইঁদুরের দেহে কার্যকরি হওয়ার জন্য একমাত্রা বিষের ক্ষেত্রে একবার এবং বিহুমাত্রা বিষের ক্ষেত্রে কয়েক বার খেতে হয়। একমাত্রা দীর্ঘ মেয়াদি বিষের মধ্যে, তীব্র বিষক্রিয়া গুণাগুণ বিদ্যামন। তবে এই বিষ একবার খেলে  ২-৩ দিন পরে ইঁদুরের মৃত্যু ঘটে। এক্ষেত্রে বিষটি কার্যকর হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর বার বার প্রয়োগ করতে হয়। যেমন-ডাইফেনাকাম, ব্রোডিফেকাম, ব্রোমাডিওলন ইত্যাদি। বহুমাত্রা দীর্ঘমেয়াদি বিষের বেলায় বিষ টোপ বার বার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রদান করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া বন্ধ হয়। এ ধরণের বিষটোপ হলো ওয়ারফেরিন, ফিউমারিন, ক্যালসিফেরন এর ০.০২৫-০.০৩৭৫% ঘনমাত্রার কার্যকরি উপাদান। আমাদের দেশের  কৃষক একমাত্রা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষের পার্থক্য সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একমাত্রা বিষ প্রয়োগ করে এবং ইঁদুর মরা অবস্থায় দেখতে চায়। আবার একমাত্রা বিষ প্রয়োগের কারণে ইঁদুরের যে আচরণগত পরিবর্তন  (যেমন- বিষটোপ লাজুকতা) হয় সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম।
গ্যাস/বড়ি : গ্যাস বড়ি বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন করার মাধ্যমে ইঁদুর মেরে ফেলে। ইঁদুরের গর্তে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি দিয়ে গর্তের মুখ ভাল করে বন্ধ করে দিলে ইঁদুর মারা যায়। এ জন্য বারো সিস্টেমের নতুন সচল গর্তে গ্যাস বড়ি দিয়ে আশপাশের সকল গর্তের/নালার মুখ মাটি দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দিতে হবে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট ছাড়াও ফসটক্সিন ট্যাবলেট, হাইড্রোজেন/রাসায়নিক ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিষটোপ প্রয়োগের স্থান
ইঁদুর নতুন মাটি বের করেছে এধরনের সচল গর্তের ভেতরে বিষটোপ দিতে হবে। একটি গর্তে অনেকগুলো মুখ থাকতে পারে, তবে যে গর্তের মুখে নতুন মাটি পাওয়া যাবে শুধু সেই গর্তের ভেতর বিষটোপ  দিতে হবে। একটি গর্তে জিংক ফসফাইড বিষটোপের একটি টুকরা (কেক) অথবা বড়ি প্রয়োগের পর গর্তের সকল মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে। ল্যানির‌্যাট ছোট পাত্রে বা মোটা কাগজের পোটলা তৈরি করে সচল গর্তের মুখে রাখতে হবে।
রাসায়নিক রিপলেন্ট
গুদামজাত বীজে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে তা রিপলেন্ট হিসাবে কাজ করে। যেমন-গেছু ইঁদুর/ঘরের ইঁদুর ম্যালাথিয়ন ব্যবহারিত স্থান এড়িয়ে চলে। এছাড়া দেখা গিয়েছে যে, সাইক্লোহেক্সামাইড ব্যবহৃত এলাকায় ইঁদুরের উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য।
ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়
১. যে কোন ফসলের থোড় আসার পূর্বে। এ সময় মাঠে ইঁদুরের খাবার কম থাকে বিধায় ইঁদুর বিষটোপ সহজে খেয়ে থাকে। ২. ঘর বাড়িতে সারা বছরব্যাপী ও বর্ষার সময়। ৩. বর্ষার সময় রাস্তাঘাট ও বাঁধে (যখন মাঠে পানি থাকে)। ৪. গভীর ও অগভীর সেচের নালায় প্রথম পানি ছাড়ার দিন।
জৈবিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন
জৈবিক পদ্ধতি হলো ইঁদুর দমনে অন্য জীবের সাহায্য নেয়া। ইঁদুরভোজী প্রাণীদের রক্ষা এবং বংশবিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। প্যাঁচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ, বিড়াল জাতীয় প্রাণীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, জর্ডান, মালয়েশিয়া ও হাঙ্গেরী মাঠ ফসলের ইঁদুর দমনে প্যাঁচার ব্যবহার করছে। এজন্য তারা প্যাঁচার প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণের পাশাপাশি এর প্রজনন ও প্রতিপালন কার্যক্রমকে কৃষক পর্যায়ে উৎসাহিত করছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, একজোড়া প্যাঁচা চার মাসের একটি প্রজনন চক্রে ৪ থেকে ৬টি বাচ্চার লালন-পালনে ৫০-৭০ গ্রাম ওজনের প্রায় ৩০০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত ইঁদুর ভক্ষণ করতে পারে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্যাঁচার প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কোন এলাকায় কোন প্রজাতির প্যাঁচা বেশি তার সঠিক তথ্য জানা নেই। অনেকে প্যাঁচাকে অলক্ষণের প্রতীক মনে করে। কিন্তু প্যাঁচা মানুষের কোন ক্ষতি করে না বরং নীরবে-নিভৃতে ইঁদুর দমন করে মাঠের ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। তাই জন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এদের সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের সুযোগ করে দিতে হবে।
পরিবেশসম্মত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা (ঊপড়ষড়মরপধষষু-নধংবফ জড়ফবহঃ গধহধমবসবহঃ, ঊইজগ)
এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পরিবেশসম্মত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ধারণার ওপর ভিত্তি করে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে নিরাপত্তা, আর্থিক লাভ এবং স্থায়ী দমন ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদের দেশে ইঁদুর দমনের জন্য মূলত বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ও রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণে ইঁদুর দমন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয় না। প্রাথমিকভাবে রাসায়নিক বিষকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় । রাসায়নিক বিষ ব্যবহারের ফলাফল প্রায়ই ব্যর্থ হয়। সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার না করা এবং রাসায়নিক বিষে ইঁদুর প্রতিরোধী হয়ে যাওয়াও ইহার অন্যতম কারণ। ফাঁদ ও রাসায়নিক বিষের সাথে সাথে অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারলে আর্থিক ও পরিবেশগত দিক থেকে ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা টেকসই হবে। জৈবিক পদ্ধতিকে ইঁদুর দমনকে বর্তমান সময়ে ইবিআরএম এর একটি আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবেশসম্মত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনায় জৈবিক দমন পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করলে দীর্ঘমেয়াদে ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে ইহা মূল্যবান কৌশল হিসাবে কাজ করবে। সমকালীন চাষাবাদ, মাঠ এবং বাড়ি ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, আইলের প্রশস্ততা ৩০ সেমি. এর কম রাখা এবং সবাই মিলে একত্রে দমন কৌশল গ্রহণ করার মাধ্যমে পরিবেশসম্মত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে জোরদার করা সম্ভব। য়  
১-৩প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত¡ বিভাগ, বিআরআরআই, গাজীপুর-১৭০১, মোবা: ০১৭১৫০১১৩৫১, ইমেইল : shamiulent@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon